সর্বশেষ

জীবনযাত্রার চ্যালেঞ্জ উচ্চ ব্যয় দুটি কারণে

/ নয়াদিল্লি, নমপ্যান, হ্যানয়, মুম্বাই, হোচি মিন, জাকার্তা, ব্যাংকক, বেইজিং, সাংহাই এসব শহরের তুলনায় ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি হলেও গুণগত মানের দিক থেকে সবার নিচে /

প্রকাশ :


২৪খবরবিডি: 'ঢাকা শহরের মানুষের জীবনযাত্রার জন্য দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জকে সামনে এনে তা মোকাবিলায় সরকারকে কয়েক দফা সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক। চ্যালেঞ্জ দুটি হলো, জীবনযাত্রার ব্যয় ও যানজট। এ দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঢাকা-চট্টগ্রামের পাশাপাশি অন্যান্য সব জেলায় শিল্পায়ন, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে।'
 

'একই সঙ্গে ঢাকার ওপর থেকে জনসংখ্যার চাপ কমাতে কলকারখানা ও সরকারি বিভিন্ন দফতরের বিকেন্দ্রীকরণ করাও জরুরি বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। ঢাকা, চট্টগ্রাম ছাড়াও বড় শহরগুলোর বিদ্যমান নাগরিক সুবিধাদি জেলা-উপজেলা শহরেও বিস্তৃত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জেলা-উপজেলায় ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানেরও সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সামাজিক আর্থিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ ও বাজারমূল্য পর্যালোচনায় বিশ্বব্যাংক মনে করে, এক বছরের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। জীবন রক্ষাকারী ছাড়াও বহুল ব্যবহৃত প্যারাসিটামল টাইপের ওষুধের দামও বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির উত্তাপ তো বাড়ছেই। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে দুই অঙ্কের ঘর ছুঁই ছুঁই করছে মূল্যস্ফীতি। এর ফলে নয়াদিল্লি, নমপ্যান, হ্যানয়, মুম্বাই, হোচি মিন, জাকার্তা, ব্যাংকক, বেইজিং, সাংহাই এসব শহরের তুলনায় ঢাকায় জীবনযাত্রার ব্যয় বেশি হলেও জীবনযাত্রার গুণগত মানের দিক থেকে ঢাকা সবার নিচে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত 'বাংলাদেশ কান্ট্রি ইকোনমিক মেমোরেন্ডাম চেঞ্জিং অব ফেব্রিক' শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।  এদিকে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম অব্যাহতভাবে কমলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। জ্বালানির এই দাম বৃদ্ধি ও পরিবহন খাতের ভাড়া বাড়ার ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় লাগামহীনভাবে বাড়ছে। একই সঙ্গে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ঢাকায় অসহনীয় যানজট অবস্থা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। ফলে ঢাকা শহরের মধ্যে যান চলাচলের গড় গতি নেমে এসেছে ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটারেরও কম। এ অবস্থা চলতে থাকলে অল্প কিছুদিনের মধ্যে এটা ৪ কিলোমিটারে নেমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।'


'বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উৎপাদনশীলতা এবং আয় বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাসে নগরায়ণ একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঐতিহাসিকভাবে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি দ্বারা চালিত হয়েছে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সঙ্গে পরিবর্তনের দুটি মৌলিক প্রক্রিয়া জড়িত; কৃষি থেকে অকৃষি কার্যক্রমে কাঠামোগত রূপান্তর এবং গ্রামীণ থেকে শহরে স্থানিক রূপান্তর।

জীবনযাত্রার চ্যালেঞ্জ উচ্চ ব্যয় দুটি কারণে

অকৃষি কার্যক্রম, যা প্রায়শই শহরাঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হয়, উচ্চ উৎপাদনশীলতার সঙ্গে যুক্ত। এভাবে একদিকে অকৃষি কার্যক্রম এবং নগরায়ণের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে এবং অন্যদিকে উৎপাদনশীলতা এবং জীবনযাত্রার মান। বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি শহরাঞ্চলে বাস করে এবং বিশ্বব্যাপী মোট দেশজ উৎপাদনের ৮০ শতাংশেরও বেশি (জিডিপি) শহরগুলোতে উৎপাদিত হয়, যা উৎপাদনশীলতা এবং কাজের বৃদ্ধি এবং শেষ পর্যন্ত দারিদ্র্য হ্রাসে নগরকেন্দ্রিক সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে।'
 

'প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক দশক ধরে নগরায়ণের ধরন নিশ্চিত করে যে এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীভূত হয়েছিল ঢাকা শহর। ভবিষ্যৎ নগরায়ণের জন্য একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে ঢাকার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির গতিকে ধরে রাখা যায়। ঢাকা শহর শুধু বাংলাদেশের শহুরে শ্রেণিবিন্যাসেই নয়, নগরায়ণের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেও একটি কেন্দ্রীয় স্থান দখল করে আছে। দেশের অর্থনীতিতে ঢাকা শহরের একটি বড় প্রভাব রয়েছে। বৃহত্তর ঢাকা এক-পঞ্চমাংশ উৎপন্ন করে দেশের জিডিপি এবং তার আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের প্রায় অর্ধেক এবং তার আনুষ্ঠানিক উৎপাদন কর্মের ৩০ শতাংশেরও বেশি তৈরি করে। অথচ এই রাজধানীর জীবনযাত্রার ব্যয় অব্যাহতভাবে বাড়ছে। যা একটা বড় জনগোষ্ঠীর জন্য অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করছে। অনেকেই জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে না পেরে ঢাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকার যানজট ব্যবস্থাপনায়ও চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। এ শহরের মধ্যে গড় যান চলাচলের গতি ঘণ্টায় ৭ কিলোমিটারের কম। যা মানুষের জ্বালানি সম্পদের অপচয় করছে। একই সঙ্গে মানুষের গুরুত্বপূর্ণ কর্মঘণ্টার ক্ষতি করছে। এতে পিছিয়ে পড়ছে অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারা। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ২৪খবরবিডিকে বলেন, একটা শহরের জীবনযাত্রার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা প্রয়োজন সেগুলো ঢাকার নেই। যেমন দ্রুত গতিতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করা। স্বল্পমূল্যে উন্নত সেবা প্রদান। এমনকি ঢাকার বাতাসের যে স্বাস্থ্য তা তো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর।'

 

'ফলে এখানকার জীবনযাত্রা দিন দিন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এ জন্য ঢাকা এবং চট্টগ্রামের শহরের মতো রূপান্তর অন্যান্য শহরগুলোর জন্য নতুন কর্মকান্ড এবং আরও ভালো চাকরি আকর্ষণ করার সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যেহেতু শহুরে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পায়, নিম্ন-উৎপাদনশীল উৎপাদন এবং পরিষেবাগুলো বড় শহরগুলো থেকে বেরিয়ে ছোট এবং মাঝারি আকারের শহরগুলোতে চলে যায় যেগুলো বড় শহর এবং বাণিজ্য নেটওয়ার্কগুলোর সঙ্গে ভালোভাবে সংযুক্ত। ঢাকায় এই রূপান্তর চলছে, যার ফলে অনেক পোশাক কারখানা আশপাশের জায়গায় চলে যেতে দেখা গেছে। এতে অবশ্য কর্মসংস্থানের বিকেন্দ্রীকরণ হচ্ছে। যা খুবই জরুরি। গাজীপুর এবং সাভারের মতো আশপাশের জেলাগুলোতেও পোশাক খাতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘনত্ব তৈরি হয়েছে। এই স্থানগুলো শুধু পরিবহন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত নয় বরং উন্নত ডিজিটাল সংযোগ রয়েছে এবং বন্যার জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ।'

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত